মণিশংকর বিশ্বাস

মণিশংকর বিশ্বাসের কবিতাগুচ্ছ

 

 

মুনমুন

আপনার সঙ্গে আমার কখনও যৌনতা হয়নি
হওয়া সম্ভবও ছিল না
তবু আপনার সঙ্গে আমার যে কত যৌনস্মৃতি
কত যে স্মৃতিকাতরতা!

আপনার নামের ভিতর দু’ দু’বার ‘চাঁদ’ শব্দটা আছে
সেটা আমি বুঝি ঠিক এভাবে:
একটা ট্রেন টানেলের ভিতর ঢুকছে
আর আলোয় ভরে উঠছে কামরার ভেতরটা
তারপর ট্রেনটা যখন বাইরে বেরিয়ে আসছে
বাইরেটা আবার আলোঝলমলে

 

 

দুঃখ ২

ইমতিয়াজ মাহমুদ ভাই লিখেছেন, “অসুখী মানুষ যখন ঘুমায়
তখনও তার চেহারায় দুঃখ জেগে থাকে।”
এটা পড়েই আমার মনে পড়ল, মৃত্যুর পরে বাবার মুখখানা—

বাবা যেন হাসছেন!

মানুষ মরে গেলে তাহলে তাঁর দুঃখও মরে যায়!

 

 

বন্ধু

তুমি যে বিশাল একটা কিছু, সকলেই জানে
সকলেই বোঝে এ কথা

তুমি যখন হাত রাখো কাঁধে
এমনকি আমারও
তোমার হাতের নিচে
নিজেকে ছোট একটা বিষ পিঁপড়ে মনে হয়

 

 

জাদু

ছেলেটি বলছে মেয়েটিকে, “৭.১০-এর মেলট্রেনটা পেয়ে গিয়ে
আজ প্রায় ১ ঘণ্টা সময় বাঁচালাম।”

সেই থেকে হতবাক হয়ে আছি

যে সময় মৃত, তাকেও তাহলে বাঁচিয়ে তোলা যায়!

 

 

আমি আরও দূরে যাচ্ছি

জন্ম থেকে যত মানুষের সঙ্গে আজ পর্যন্ত দেখা হয়েছে, মিশেছি, এক ক্লাসে বা স্কুলে পড়েছি, খেলেছি, সাঁতার কেটেছি, আড্ডা দিয়েছি, ধূমপান করেছি, ঝগড়া করেছি, আনন্দ করেছি, বৈধ বা অবৈধ যৌনতা করেছি, বহুদূরে বেড়াতে গিয়ে নদীর ধারে বসে পান করেছি, বাসে-ট্রেনে না জেনে পা মাড়িয়ে দিয়েছি, অকারণে কটূক্তি করেছি, আমাকে যারা ভালোবেসেছে, স্নেহ-আদর-করুণা করেছে, বা গড়িয়ে দিয়েছে অন্ধকারে, শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করতে চেয়েছে, অপমান করেও ঝাল মেটেনি…এরপরেও যাদের সঙ্গে দেখা হবে, কেউই হয়তো জানে না, আসবার পথে নয় বরং এখান থেকে আমি
ফিরে
যাবার
পথে
আমাদের
দেখা
হয়েছিল

 

 

 

প্রতিবিম্ব

একটা পৃথিবী—টাইম আর স্পেসের অন্য কোনো অক্ষাংশে
সেখানে বসে কেউ ভাবছে এক প্রতিবিশ্বের কথা
ভাবছে বিকল্প এক বিশ্ব আছে…যেখান থেকে কেউ
লিখে রাখছে আসল পৃথিবীর কথা
অথচ যে লোকটা এসব লিখছে, সে কিন্তু একটুও বোঝেনি
সে নিজে রয়েছে অপর ওই পৃথিবীতে
আর সেই কল্পনার পৃথিবীতে বসে লিখে রাখছে আসল পৃথিবীর কথা
আসল পৃথিবী… যেখান থেকে তাকে দিয়ে কেউ লেখাচ্ছে এসব…

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment